ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কি? ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে?

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কি

Last Updated on: 23rd জানুয়ারি 2022, 05:34 পূর্বাহ্ন

হ্যালো বন্ধুরা এই পোস্ট এ আমরা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কি সেই সম্পর্কে আলোচনা করবো।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ পরিষেবা মূলত প্রথম দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিষেবা যেটি আসলে DSL (or Digital Subscriber Line), ফাইবার অপটিক ক্যাবল ,স্যাটেলাইট মাধ্যমে দেয়া হয়। ব্রডব্যান্ড পরিষেবা এর গতি কমপক্ষে ২৫০কিলোবিটস প্রতি সেকেন্ড থেকে শুরু করে ১ গিগাবাইট বা তারও বেশি হতে পারে।

তবে FCC (ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর সংস্থার হিসাবে একটি আদর্শ ব্রডব্যান্ড এর গতি ন্যূনতম ডাউনলোড হতে হবে ২৫ Mbps আর আপলোড এর গতি হতে হবে ন্যূনতম ৩ Mbps .

বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষজন তাদের পুরাতন ডায়াল আপ কানেকশন ছেড়ে এই দ্রুত গতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবার দিকে ঝুঁকছেন।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ এর দিকে দেখতে গেলে বিশ্বের কয়েকটি দেশ এই ক্ষেত্রে সর্বাধিক ব্যান্ডউইথ ব্যাবহার করে। ২০১৪ সালের হিসাব অনুযায়ী চীন সবচেয়ে এগিয়ে (ইনস্টলড ব্যান্ডউডথ ২৯%),তারপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইনস্টলড ব্যান্ডউডথ ১৩%),তারপর জাপান (ইনস্টলড ব্যান্ডউডথ ৮%).

এবার আসুন একটু বিশদে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কি ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে সেই সম্পর্কে আলোচনা করে নি।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এর প্রকারভেদ :

১. DSL (or Digital Subscriber Line) এর মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা

DSL বা ডিজিটাল সাবস্ক্রাইবার লাইন এর মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা বর্তমানে ব্রডব্যান্ড এর জন্য একটি অন্যতম প্রধান মাধ্যম। DSL বা ডিজিটাল সাবস্ক্রাইবার লাইন এর মাধ্যমে আসলে টেলিফোন লাইন এর অব্যাবহৃত তার এর অংশ (যেগুলি টেলিফোন লাইন এর কোনো বাঘ্যাৎ করে না )ব্যাবহার করে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা।

DSL ব্রডব্যান্ড মডেম

আমার ব্যাক্তিগত ইন্টারনেট পরিষেবা এখন এই গোত্রের। এই DSL বা ডিজিটাল সাবস্ক্রাইবার লাইন এর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এর গতি মূলত তার switching station এর উপর নির্ভর করে। আপনার যত কাছে switching station থাকবে তত আপনার ইন্টারনেট এর গতি বাড়বে।

২. ক্যাবল (Cable)এর মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা

ক্যাবল এর মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা আরো একটি জনপ্রিয় উপায়। এ ক্ষেত্রে লোকাল বা স্থানীয় ক্যাবল টেলিভশন অপারেটর বা MSO(মাল্টি সিস্টেম অপারেটর ) এই পরিষেবা দিয়ে থাকে তাদের ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যাবহার করে। অনেক সময় এই ক্ষেত্রে ইন্টারনেট এর গতি DSL এর থেকে কিছুটা বেশি হয়।

তবে আপনি কতটা গতি পাবেন তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনি কোন সময় ইন্টারনেট ব্যাবহার করছেন আর ঠিক ওই ওমর আপনার মতো ঠিক আরো কতজন নেটওয়ার্ক ব্যাবহার করছেন।একসাথে বেশি মানুষ নেটওয়ার্ক ব্যাবহার ৰলে আপনার গতি কমে যাবে আর কম মানুষ ব্যাবহার করলে গতি বাড়বে।

৩. ফাইবার অপটিক এর মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা

ফাইবার অপটিক এর মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বর্তমানে খুব জনপ্রিয় হচ্ছে আর গতির দিক থেকে সবচেয়ে ভালো। তবে সব জায়গাতে এখনো ফাইবার অপটিক পরিষেবা এখনো আসেনি। DSL এ যেখানে তামার টেলিফোন তারের ব্যাবহার হয়,সেখানে এখানে মূলত ফাইবার অপটিক ক্যাবল এর মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা দেয়া হয়।

ফাইবার অপটিক ক্যাবল এর ব্রডব্যান্ড অন্য সব ব্রডব্যান্ড এর থেকে আলাদা। এখানে ডাটা বা তথ্য বিদ্যুৎ তরঙ্গ এর পরিবর্তে আলোক তরঙ্গ হিসাবে পরিবাহিত হয় যা আলোর গতির ৭০% গতি পর্যন্ত যেতে পারে।

ইন্টারনেট এর গতিও এর কারণে দারুন দ্রুত হয় প্রায় ৯৪০ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ড বা তারও বেশি হতে পারে। আপলোড ,ডাউলোড সময় দ্রুত হয়,ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস খুব ভালো কাজ করে। উদহারণ হিসাবে বলা যায় একটা ২ ঘন্টার HD মানের সিনেমা এহানে কয়েক মিনিট হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে জিও গিগা ফাইবার দারুন উপযোগী।

কি দারুন তাই না?

ফাইবার অপটিক ক্যাবল গুলি খুবই সুক্ষ হয়ে থেকে যার ব্যাস প্রায় ১২৫ মাইক্রন হতে পারে।

আরো পড়ুন : শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবস্থা কি

৪. স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা

স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড খুবই আধুনিক প্রযুক্তি।গ্রামাঞ্চল বা প্রত্যন্ত এলাকা যেখানে প্রথাগত DSL পরিষেবা এখনো আসেনি সেখানে এটি কার্যকর হতে পারে। তবে দামের দিক থেকে এই প্রযুক্তি এখনো অনেকটা ব্যায়বহুল।

৫.মোবাইল ব্রডব্যান্ড

বর্তমানে মোবাইল ব্রডব্যান্ড বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মোবাইল ব্রডব্যান্ড হলো মূলত তারবিহীন ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড পরিষেবা যেটি মূলত ওয়্যারলেস মডেম বা USB মডেম এর মাধ্যমে কাজ করে। মোবাইল ব্রডব্যান্ড প্রথম ১৯৯১ সালে প্রথম কাজ করা শুরু করে ও পরে ৩জি ,৪জি প্রযুক্তি আসার পর এর গতি অনেক বেড়ে যায়। মোবাইল ব্রডব্যান্ড ২২৫ থেকে ৩৭০০ মেগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি তে কাজ করে। ৪জি পরিষেবার মধ্যে এর নানা গতির হেরফের হয়।

HSPA+ এর ক্ষেত্রে ডাউনলোড গতি হয় ২১ -৬৭০ এমবিপিএস (Mbps) ,আপলোড গতি ৫.৮ থেকে ১৬৮ এমবিপিএস (Mbps)।
LTE-Advanced প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ডাউনলোড ১৫০ এমবিপিএস (Mbps)

আপনার পক্ষে কোনটি ব্রডব্যান্ড কানেকশন উপযুক্ত হবে?

এখন আনার সঠিক কোন ব্রডব্যান্ড কানেক্শনটি দরকার বা উপযুক্ত হবে তা জানতে গেলে আপনাদের কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে.

আপনি ঠিক কোন কাজ এর জন্য ব্রডব্যান্ড কানেকশন ব্যাবহার করবেন এটি বেশ দরকারি বিষয়। আপনি যদি শুধু ইন্টারনেট ব্রাউসিং ,অল্প কিছু অফিস এর কাজ বিশ্ব হালকা কাজ করেন তবে আপনার জন্য ১০ এমবিপিএস (Mbps) এর ব্রডব্যান্ড হলেই চলবে।

তবে আপনি যদি ভিডিও স্ট্রিমিং অনলাইন গেমিং,বা বড়ো ফাইল ,মুভি ডাউনলোড করতে চান তার জন্য আপনার ১০০ এমবিপিএস (Mbps) এর ব্রডব্যান্ড কানেকশন এর দরকার পড়বে। তাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেকশন নেবার আগে ভালো করে এই বিষয়টি মাথায় রাখবেন।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ খরচ:

আপনাদের এবার জানিয়ে দি ব্রডব্যান্ড কানেকশন নিতে আনুমানিক খরচ কত হতে পারে।

ব্রডব্যান্ড কানেকশন নিতে ভারতে যদি আপনি BSNL এর সংযোগ নেন থামলে ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকার মতো খরচ পড়বে যার মধ্যে আপনার ইনস্টলেশন,WiFi মডেম ,আর ৫০০ টাকার সিকিউরিটি ডিপোজিট থাকে।বাকি টেলিকম অপারেটর গুলির খরচ ও ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। এর পর মাসে মাসে আপনাকে শুধু বিল দিয়ে যেতে হবে।

Bangladesh Telecommunication Regulatory Commission (BTRC) এর বাংলাদেশ এর জন্য ১০ এমবিপিএস (Mbps) এর জন্য Tk800-1,000,আর ১০ এমবিপিএস (Mbps) এর জন্য Tk1,100-1,200 খরচ করতে হবে।

WiFi আর ব্রডব্যান্ড কি এক ?

অনেকের মনেই এই প্রশ্ন আছে যে WiFi আর ব্রডব্যান্ড কি একই জিনিস? এর সহজ উত্তর হলো না। ব্রডব্যান্ড হলো আপনার মডেম/রাউটার এর সাথে আপনার ISP (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) এর কানেকশন। কিন্তু WiFi হলো আপনার মোবাইল,ল্যাপটপ এর সাথে আপনার মডেম এর নিজস্ব ওয়ারলেস বা তারবিহীন সংযোগ। তাই দুইটি ব্যাপার আলাদা।

শেষ কথা :

আশা করি উপরের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কি এই পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লাগলো। আপনারা কোন ব্রডব্যান্ড সংযোগ ব্যাবহার করেন? দয়া করে নিচের কমেন্ট বাক্স এ কমেন্ট করে জানাবেন আর ভালো লাগলে পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না ! ধন্যবাদ।

সৌমিক ঘোষ

About সৌমিক ঘোষ

সৌমিক ঘোষ একজন ইন্টারনেট মার্কেটিং প্রফেশনাল, ব্লগার। তিনি ইন্টারনেট মার্কেটিং এ প্রায় ১২ বছর ধরে কাজ করছেন ।ব্লগিং ছাড়াও অবসর সময় এ গান শোনা তার একটি নেশা।

View all posts by সৌমিক ঘোষ →

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।