শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট কি ভাবে করা যায়?

শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট

Last Updated on: 22nd সেপ্টেম্বর 2024, 10:06 পূর্বাহ্ন

হ্যালো বন্ধুরা আজকের এই পোস্টটি আমরা শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবস্থা আলোচনা করব। ইন্টারনেট আজকের দুনিয়ায় প্রতিনিয়ত ব্যবহার হচ্ছে বর্তমানে ইন্টারনেট আজ আর কোন ব্যয়বহুল পরিষেবা নয় বিশেষ করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। এশিয়া যেমন ভারতবর্ষে আজ মানুষের হাতে হাতে মোবাইলে দৌলতে ইন্টারনেট পৌঁছে গিয়েছে কিন্তু ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই কিছু খারাপ দিকও বর্তমানে নজরে আসছে বিশেষ করে শিশুদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবস্থা কিভাবে নিরাপদে ব্যবহার করা যায় সেই সম্পর্কে আজকে অনেক মানুষই ওয়াকিবহাল নন তাই আজকে শিশুদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবস্থা কিভাবে আরো একটু নিরাপদ করা যায় তার জন্যেই বিস্তারিত এই পোস্টে আমরা আলোচনা করব।

উনিসেফ এর একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে সারা বিশ্বে প্রতি ৩জন প্রতি ১ জন ইন্টারনেট ব্যাবহার করে আর এই ৩ জনের মধ্যে ১ জন এর বয়স ১৮ বছরের কম। তাহলে এখন থেকেই বোঝা যাচ্ছে শিশু আর টিন এজ এর কাছে ইন্টারনেট কতটা জনপ্রিয়।

বাজার শিশুদের জন্য ইন্টারনেটের খারাপ দিক গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সাইবার বুলিং, হ্যারাসমেন্ট ,এবং প্রাইভেসি সংক্রান্ত সংক্রান্ত নানা জিনিস উলঙ্ঘন। বড়দের থেকে টিন এজ রা সবসয় সহজ টার্গেট। আজকাল শিশু তারা টিনএজদের হাতে হাতে মোবাইল ঘুরে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইট থেকে শুরু করে ডেটিং ওয়েবসাইট ক্ষতিকারক অনলাইন গেমস সমস্তকিছুই আজকালের আওতায় পড়ে যাচ্ছে।

এখানে উদহারণ হিসাবে কুখ্যাত ‘Blue Whale Challenge’ অনলাইন গেম এর কথা বলা যায় যার জন্য দেশ বিদেশে অনেক শিশু , টিন এজ রা প্রাণ পর্যন্ত দিয়েছিলো। ২০১৬ সালে আলোড়ন তোলা ওই অনলাইন গেম এ প্রথমে কিছু নিরীহ হিসাব শুরু হতো কিছু টাস্ক দিয়ে যেখানে কিছু সহজকাজ দেয়া হতো তারপর তা শেষ পর্যন্ত আত্মঘাতী করতে বাধ্য করতো। একবার সেই জালে পড়লে বেরিয়ে আসা খুব সহজ ছিল না।

এসব ক্ষেত্রে নানাভাবে ভয় দেখিয়ে টিন এজ দের টার্গেট করা হতো। ২০১৫ সালে প্রথমে রাশিয়া তে এটি প্রথমে নজরে আসে যখন একজন একটি সেলফি পোস্ট করে আত্মহত্যা করে। তারপর এটি সারা দুনিয়াতে আলোড়ন তোলে।

কিন্তু কখন কিভাবে ইন্টারনেটের এই সমস্ত বিষয়বস্তু গুলি কে এড়িয়ে স্বচ্ছভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় সেই সম্পর্কে শিশুদের তেমন কোন ধারণা থাকে না একটি সমীক্ষা অনুযায়ী বর্তমান টিনেজ এবং শিশুরা প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে সেলফোন বা মোবাইলের দ্বারা তার ইন্টারনেট এক্সেস করে ৬৪ শতাংশ ট্যাবলেট ব্যবহার করে এবং বাকি শতাংশ কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মাধ্যমে তাদের বেডরুমে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেখা যায়।

তাই অনেক ক্ষেত্রেই সব সময় শিশুদের ওপর নজরদারি করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। আমাদের এর মধ্যেই খুবই সতর্ক ভাবে শিশুদের উপর ইন্টারনেট ব্যবস্থার ক্ষতিকারক প্রভাব যাতে না পড়ে সেই সম্পর্কে সচেতন ভাবে তাদের শিক্ষা দিতে হবে।

১. শিশুমনে সচেতনতা বাড়ানো

আপনি কি কিভাবে আপনার শিশুকে ইন্টারনেট এর ক্ষতিকারক দিক থেকে দূরে রাখবেন প্রথমত আপনার শিশুদের ইন্টারনেটের খারাপ দিক সম্পর্কে সচেতন করুন ইন্টারনেটে যেমন ভালো জিনিস আছে তেমনি খারাপ হয়েছে প্রচুর রয়েছে তাই শিশুদের থেকে সেইগুলির না লুকিয়ে প্রথমত কিছুতেই সে সম্পর্কে শিক্ষিত করে তোলা উচিত। কোন সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট এবং কোন সাইট কোন অ্যাপ বা সফটওয়্যার ব্যবহার করবে সে সম্পর্কিত তাদের কে সম্পূর্ণরূপে সচেতনতা বাড়ান।

দরকার হলে আলাদা করে আপনার সাথে কথা বলুন এবং এই বিপদ সম্পর্কে সচেতন করে দিন. বিশেষ করে আপনারা আপনাদের বোঝান কোন কোন সাইট গুলো ক্ষতিকারক এবং কি করে ভাইরাস ,নানা স্প্যাম তাদের কম্পিউটার বা মোবাইলে অজান্তে ঢুকে যেতে পারে সেগুলি বলে দিন।

নানা বিতর্কমূলক অনলাইন ফোরাম এবং অনলাইন স্ক্যাম সম্পর্কেও আমরা সচেতন করে দিন এবং যৌন উস্কানিমূলক বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা প্রচার সম্পর্কে আপনার শিশুদের একটি প্রাথমিক ধারণার দিয়ে রাখুন যাতে তারা এই বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলে।

মনে রাখবেন কোন কিছু লুকিয়ে নয় সচেতন করলেই আপনার টিনেজ এই সমস্ত দিক গুলি থেকে অনেক দূরে থাকতে পারবে।

অনেক সময় দেখা যায় এই সমস্ত ক্ষেত্রে আপনার শিশুর মনে নানা প্রশ্ন থাকে কিন্তু এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর সরাসরি আপনাকে করতে পারে না তাই একটি সুস্থ আলোচনার মাধ্যমে আপনি আপনার শিশকে সেই সম্পর্কে আগে থেকে সচেতন করে দিলে তাদের মনেও এই সন্দেহ থাকবে না এবং তারা এই সব থেকে অনেক দূরে থাকবে।

২ ইন্টারনেট ব্যাবহার এর জন্য কিছু নিয়ম করে দিন

আপনার শিশুর সঙ্গে আলোচনা করে কিছু রুল বা নিয়ম সেট করে দিন যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো মেনে চলে। প্রথম মতো কোনো ব্যক্তিগত নাম্বার অ্যাড্রেস নাম সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার বাড়ির এড্রেস সুজয় মিডিয়াতে তাদের না শেয়ার করতে বলুন। কোন ব্যক্তিগত ফটো কোন পাবলিক ওয়েবসাইটকে পোস্ট করতে মানা করুন। কোন অচেনা ব্যক্তির সাথে চ্যাটিং এর জড়িয়ে পড়তে নিষেধ করুন।

কোন প্রতারণামূলক ইমেইলে অ্যাটাচমেন্ট খুলতে বারণ করুন কোন অচেনা ব্যক্তির সাথে আগে থেকে পরিচয় না থাকলে সরাসরি দেখা করতে বারণ করুন এবং সর্বোপরি কতক্ষণ আপনার শিশুরা ইন্টারনেট ব্যবহার করছে তার ওপর একটা নির্দিষ্ট নিয়ম করুন উদাহরণস্বরূপ আপনি প্রতিদিন আপনার শিশুদের জন্য এক থেকে দুই ঘন্টা ইন্টারনেট ব্যবহার করবে এই রকম একটি নির্দিষ্ট নিয়ম সেট করে দিচ্ছে তাদের অতিরিক্ত সময় ইন্টারনেট না থাকে এবার আপনিও কি সতর্কতা মূলক স্টেপ নিন।

শিশুদের করার সঙ্গে সঙ্গে আপনাকেও কিছু সতর্কতা মূলক দেবে আপনার ইন্টারনেট পরিষেবা কিভাবে করতে হবে উদাহরণস্বরূপ যখন আপনি আপনার শিশুকে যখন স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ব্যবহার করতে দিচ্ছেন তখন আপনি শক্ত পাসওয়ার্ড সেট করে দিন। আর হ্যা এই পাসওয়ার্ড আপনি মনে রাখুন। বেডরুমে আপনার শিশুদের কম্পিউটার বা ল্যাপটপ না রেখে থেকে সেটি একটি কমন রুমে রেখে ব্যাবহার করতে বলুন যাতে করে সবই তার উপর নজর রাখতে পারে।

৩.টেকোলোজি এর সাহায্য নিন

আপনি নানা সিকিউরিটি সফটওয়্যার এবং কোন অ্যাপ এবং কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করবে সেই গুলি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপস বা সফটওয়্যার ব্যবহার করুন।

নিয়মিত আপনার শিশুদের অনলাইন ব্রাউজিং হিস্ট্রি চেক করুন সিকিউরিটি সফটওয়্যার এবং টুল ব্যবহার করুন আপনার আইএসপি বা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এর প্রাইভেসি সেট করুন প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সফটওয়্যার এর মধ্যে যেমনি FamiSafe parental control software সেরকম কিছু সফটওয়্যার ব্যবহার করুন।

FamiSafe parental control এর অনেক কিছু ভালো দিক আছে। এই প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপস সফটওয়্যার ডেক্সটপে ব্যবহার সমস্ত অ্যাপ গুলি দেখতে পারবেন।

কোন ডিভাইস কোন সময় ব্যবহার হবে তার জন্য মনিটরিং করতে পারবেন এবং সমস্ত ডিভাইসটিকে লক করতে পারবেন এবং সমস্ত কনটেন্ট ক্যাটাগরি ভাগ করে দিতে পারবেন এছাড়াও কম্পিউটার এক্টিভিটিস সম্পূর্ণ ডিটেইলস হিস্ট্রি আপনি প্রতিদিন দেখতে পারবেন এটি তিন দিনের জন্য চাইলে আমি বের করে দেখে নিতে পারেন তার পরবর্তীকালে আপনি গুগোল প্লে আপনার থেকে এটি ডাউনলোড করে বের করতে পারবেন।

এছাড়া kidlogger Parental Control সফটওয়্যার থেকে নানা ম্যাসাজিং app থেকে মেসেজ গুলিকে লগে মাধ্যমে দেখতে পারবেন। ভিজিট করে ওয়েবসাইটগুলি প্রতি নজর রাখতে পারবেন। মেসেঞ্জার অ্যাপ এবং নানা চ্যাটিং হিস্ট্রি চেক করতে পারবেন।

এছাড়াও Surfie বলে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সফটওয়্যারটির বেশ উল্লেখযোগ্য। আপনি এর মাধ্যমে বিভিন্ন মাল্টিপেল প্রোফাইল তৈরি করতে পারবেন ইউসেজ প্রোফাইল ঐটা করতে পারবেন এবং নোটিফিকেশন চেক করতে পারবেন।.

এ ছাড়া আপনি সম্পূর্ণ ফ্রীতে একটি ভালো প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সফট্ওয়ারে খোঁজ করে থাকে সেক্ষেত্রে ওপেন ডিএনএস ফ্যামিলি শিল্ড (OpenDNS FamilyShield) আপনার জন্য বেশ ভালো হতে পারে এক্ষেত্রে আপনি সহজেই প্রিসেট কন্টেন ফিল্টার ব্যবহার করতে পারবেন ।

Image Source: OpenDNS FamilyShield

সরাসরি আপনার রাউটারের সাথে কনফিগার করে কোন ওয়েবসাইট বা কোন অ্যাপ আপনার ডিভাইস থেকে ব্যবহার করা যাবে এবং যাবে না তার সম্পর্কে সম্পূর্ণ কন্ট্রোল করে দিতে পারবেন কিন্তু মুশকিল হল এই সফটওয়্যার ব্যবহার করা খুব একটা সহজ নয় এটি ব্যবহার করতে গেলে আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজিং এবং ইন্টারনেট ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি প্রাথমিক পর্যায়ের জ্ঞান থাকতে হবে যদি আপনি কিছুদিনেই সঙ্গে পড়াশোনা করেন সেক্ষেত্রে আপনি এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে খুব সহজেই আপনি আপনার শিশুদের ইন্টারনেটের গতিবিধি সম্পর্কে নজর রাখতে পারবেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।

৪. শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট কোর্স

তাছাড়া যারা শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট কোর্স খুঁজছেন তাদের জন্য গুগল এর নিজের ‘Be Internet Awesome‘ কোর্স দারুন একটি সুযোগ।কি ভাবে নিরাপদে আপনার শিশু ইন্টারনেট ব্যাবহার করবে তার সব সতর্কতা মূলক বিষয়গুলির ব্যাপারে দারুন ভাবে বোঝানো রয়েছে এই অনলাইন কোর্স এ. এই কোর্স এর মধ্যে থাকা নানা ইন্টারেক্টিভ স্লাইডসও ‘Interland ‘নানা প্রশ্ন উত্তর এর মাধ্যমে ইন্টারনেট এ ছড়িয়ে থাকা নানা বিপদ যেমন স্প্যাম ইমেইল,জাল চ্যাট একাউন্ট,ভুয়ো সোশ্যাল মিডিয়া এই সব বিষয়ের সঙ্গে কিভাবে নিজেই বাঁচিয়ে রাখতে হবে তার উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়।

Be Internet Awesome
Be Internet Awesome

এছাড়া ক্লাসরুম এ ইন্টারনেট ব্যাবহার এর সতর্কতা মূলক কোর্স টি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করে সহজেই সবাইকে ইন্টারনেট এর নিরাপদ ব্যাবহার সম্পর্কে সচেতন করে দিতে পারেন। মনে রাখবেন এই ‘Interland ‘ ISTE (International Society for Technology in Education) আর AASL (American Association of School Librarians) standards. দ্বারা স্বীকৃত তার মানের দিক থেকে এটি বিশ্বমানের বলাই যায়।

শেষ কথা: আশা করি শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যাবস্থা কি ভাবে আরো নিরাপদ করা যায় এই পোস্ট থেকে বেশ কিছু বিষয় উঠে এলো যা সবাইকে নিরাপদ ইন্টারনেট ইকোসিস্টেম তৈরী করতে সাহায্য করবে। এই বিষয়ে কিছু জানতে চাইলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।

সৌমিক ঘোষ

About সৌমিক ঘোষ

সৌমিক ঘোষ একজন ইন্টারনেট মার্কেটিং প্রফেশনাল, ব্লগার। তিনি ইন্টারনেট মার্কেটিং এ প্রায় ১৪ বছর ধরে কাজ করছেন ।ব্লগিং ছাড়াও অবসর সময় এ গান শোনা তার একটি নেশা। | দেখুন LinkedIn প্রোফাইল

View all posts by সৌমিক ঘোষ →

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।