ফেসবুক লাইট কি ?ফেসবুক লাইট ডাউনলোড কি ভাবে করবেন ?

ফেসবুক লাইট

Last Updated on: 5th মার্চ 2022, 04:32 পূর্বাহ্ন

বন্ধুরা, আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের ফেসবুক লাইট সম্পর্কে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য জানাতে
চলেছি।

আপনি কি জানতে চান, কি এই ফেসবুক লাইট অ্যাপ? কিভাবে এটি ডাউনলোড করতে হয়? স্ট্যান্ডার্ড ফেসবুক
অ্যাপটির তুলনায় এই ফেসবুক লাইট অ্যাপ কতখানি আলাদা?

আজকের এই লেখা পড়লে, আপনাদের এই সকল প্রশ্নের উত্তর আপনারা পেয়ে যাবেন।

ফেসবুক লাইট কি? (What is Facebook Lite)

সংক্ষেপে বলতে গেলে, এটি অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোন-এর জন্য স্ট্যান্ডার্ড ফেসবুক অ্যাপের একটি সংক্ষিপ্ত
সংস্করণ। কিন্তু এটিতে নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যের অভাব রয়েছে। তবু এটি সম্পূর্ণ আকারের ফেসবুক অ্যাপের একটি
দুর্দান্ত বিকল্প।

যাইহোক, আমরা সবাই জানি, ফেসবুক আপনার সম্পর্কে অনেক তথ্য জানে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে এটি
এমন একটি অ্যাপ যার মাধ্যমে কোম্পানি আপনার ডেটা নিজেদের কাছে রাখতে পারে।

ফেসবুক লাইট অ্যাপ কি আরও ভালো?

এই আর্টিকেলে, আমরা ফেসবুক লাইট কী তা ব্যাখ্যা করব এবং এটি আদর্শ ফেসবুক অ্যাপকে প্রতিস্থাপন করতে
পারে কিনা তা বুঝতে আপনাকে সাহায্য করব।


ফেসবুক ২০১৫ সালে ফেসবুক লাইট অ্যাপটিকে, স্ট্যান্ডার্ড ফেসবুক অ্যাপের ক্ষুদ্র সংস্করণ হিসেবে এনেছিল,
যাতে ধীরগতির ইন্টারনেট কানেকশন যুক্ত ফোনে এবং কমদামের ফোনগুলিতে সহজে ফেসবুক ব্যবহার করা
যায়।

ফেসবুক লাইট অ্যাপ
ফেসবুক লাইট অ্যাপ

ফেসবুক অ্যাপটি সমগ্র বিশ্বের মানুষের ব্যবহারের জন্য তৈরি করা একটি অ্যাপ। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলির
কথা মাথায় রেখে এই ফেসবুক লাইট অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে, যা খুব দুর্বল নেটওয়ার্কেও আপনাকে ফেসবুক
ব্যবহার করার সুযোগ দেবে। এছাড়াও ফেসবুক লাইট ফোনে স্পেস বাঁচাতে সাহায্য করে এবং এখনও 2G
নেটওয়ার্ক পরিষেবায় কাজ করে।

ফেসবুক লাইট অ্যাপটি ডাউনলোড কি ভাবে করবেন ?


ফেসবুক লাইট অ্যাপটি ডাউনলোড করা খুবই সহজে। এন্ড্রোইড এর জন্য গুগল প্লে স্টোরে থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। বর্তমানে ফেসবুক লাইট এর ইন্স্টল্ এর সংখ্যা প্রায় ১০০ কোটির উপর।

গুগল প্লে স্টোরে লিংক :https://play.google.com/store/apps/details?id=com.facebook.lite&hl=en_AU&gl=US

ফেসবুক লাইটের সুবিধা (Benefits of Facebook Lite)

সাইজও এর পার্থক্য

ফেসবুক লাইট এবং ফেসবুকের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল এর সাইজ। ফেসবুক লাইট ডাউনলোড করতে ১০ MB
এরও কম নেট খরচ হয়। সেলফোনে এটি শুধুমাত্র ২.১৯ MB স্পেস নেয়। স্ট্যান্ডার্ড ফেসবুক অ্যাপটি সেখানে

১৬৭ MB এর অ্যাপ। এবার তুলনা করলে আপনারাই বুঝতে পারবেন। কাজেই, এই সাইজ একটি উল্লেখযোগ্য
পার্থক্য দুটি ভার্সন এর মধ্যে।

প্রিলোড

আবার, ফেসবুক লাইট অ্যাপ ফেসবুকের মতো ফটোগুলো প্রিলোড করে না। এর মানে হল, আপনার
নিউজফিড স্ক্রোল করার সময় ফটোগুলো লোড হতে কিছুটা বেশি সময় লাগবে, কিন্তু কম ডেটা খরচ হবে।

অটোপ্লে

আপনি আরও লক্ষ্য করবেন যে, ভিডিওগুলি স্ট্যান্ডার্ড অ্যাপে যেভাবে অটোপ্লে হয়, ফেসবুক লাইটে সেভাবে
অটোপ্লে হয়না। লাইটে অটোপ্লে তখনই হবে যখন আপনি ওয়াই ফাই এর সাথে সংযুক্ত থাকবেন৷

এছাড়া আপনি আপনার ফেসবুক লাইট-এর সেটিংসে গিয়ে, নিচের দিকে মিডিয়া এবং কন্ট্যাক্ট সেটিংসে স্ক্রোল
করে আরও বেশি ডেটা সংরক্ষণ করতে পারেন৷ ফেসবুক লাইট আপনাকে কেমন গুনমানের ছবি দেখাবে, সেটাও
আপনি নিজে নির্ধারণ করতে পারবেন। কম রিসোলিউশনের বা নিম্ন মাত্রার ফটোগুলি বেছে নিলে ফেসবুক
ব্যবহার করতে আপনার আরো অনেক কম ডেটা প্রয়োজন হবে।

ডেটা সেভিং ফিচার

স্ট্যান্ডার্ড ফেসবুক অ্যাপেও ডেটা সেভিং ফিচার আছে, তবে সেটি ফেসবুক লাইট অ্যাপের মত এতখানি ডেটা
সঞ্চয় করতে পারেনা।

ইউজার ইন্টারফেস (User Interface)

ফেসবুক লাইট সম্পূর্ণ নতুনভাবে ডিজাইন করা একটি অ্যাপ। এটিকে কেবল ফেসবুক ওয়েবসাইটের মত করে
তৈরি করা হয়েছে বললে কম বলা হবে। সত্যি কথা বলতে গেলে, এর নতুন লে আউট বা ডিজাইনটি একেবারে
খারাপ নয়; তবে এটা স্ট্যান্ডার্ড ফেসবুক অ্যাপের তুলনায় কিছুটা অন্য রকম। ধূসর রঙের ব্যাকগ্রাউন্ডের উপর
সাদা কার্ড সহ একটি আধা-আধুনিক চেহারা রয়েছে এই ফেসবুক লাইট অ্যাপের, খানিকটা রেগুলার ফেসবুক
অ্যাপের মতো।

এই ফেসবুক লাইট ব্যবহার করার সময় আপনি সেই একই ধরনের কিছু ট্যাব দেখতে পাবেন, যেমন, নিউজ ফিড,
ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট, মেসেজ, ভিডিও, নোটিফিকেশন, এবং অপশনস। তবে, আপনি তাদের মধ্যে সোয়াইপ করতে
পারবেন না,

নিউজফিড এর পার্থক্য

আপনাকে তাদের উপর ট্যাপ করতে হবে। এবার আপনাদের সামনে দুটি অ্যাপের নিউজফিড এর পার্থক্য তুলে
ধরি:

আপনারা দেখতে পাবেন, যে কেউ কিছু লাইক করেছে বা কমেন্ট করেছে কিনা তা বোঝাতে ফেসবুক লাইট
অ্যাপটিতে ছোট, কম-রেজোলিউশন-এর প্রোফাইল ফটোগুলি দেখানো হয়। আসল ফেসবুক অ্যাপের তুলনায়
লেখাগুলোও অনেক ছোট থাকে।

আবার আপনারা দেখতে পাবেন, ফেসবুক লাইটের মেনু এবং সার্চ বার স্ক্রিনের উপরে থাকে। কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড
ফেসবুক অ্যাপে মেনু বারটি নীচে রাখা থাকে। আপনি ফেসবুক লাইট-এ সাধারণত ছোট টেক্সট এবং বাটন
দেখতে পাবেন, যা কম রেজোলিউশনের স্ক্রীন যুক্ত সেলফোনের জন্য তৈরি। এছাড়া, লাইট অ্যাপে স্ক্রোল করার
সময় দেখতে পাবেন, স্ট্যান্ডার্ড ফেসবুকের তুলনায় একটু বেশি সময় লাগে।

এটা স্পষ্ট যে ফেসবুক কম RAM,কম CPU পাওয়ার এবং দুর্বল ইন্টারনেট কানেকশন যুক্ত ফোনগুলিতে অ্যাপটিকে সঠিকভাবে কাজ করার অনুমতি দেওয়ার জন্য কিছু কাটছাঁট করেছে।

মেসেজিং (Messaging)

আগে ফেসবুক লাইট অ্যাপ-এর মধ্যেই এর নিজস্ব মেসেজিং সিস্টেম ছিল। যাইহোক, এটি এখন আপনাকে
স্ট্যান্ডার্ড ফেসবুক অ্যাপের মতো একটি পৃথক মেসেজিং অ্যাপ ডাউনলোড এবং ব্যবহার করতে বাধ্য করে।
স্ট্যান্ডার্ড মেসেঞ্জার অ্যাপ ব্যবহার করার পরিবর্তে, ফেসবুক লাইট ব্যবহারকারীদের অ্যান্ড্রয়েড এবং আইফোনে
মেসেঞ্জার লাইট ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হয়। ফেসবুক মেসেঞ্জার লাইট দেখতে প্রায় রেগুলার মেসেঞ্জারের
মতোই।

আপনি যদি বড় সাইজের জন্য মেসেঞ্জার অ্যাপকে পছন্দ না করেন, তবে মেসেঞ্জার লাইট-ই সেই মেসেজিং অ্যাপ
যা আপনি খুঁজছিলেন। আর, আপনি যদি ফেসবুক-এর স্টিকারের ভক্ত হন তাহলে আপনি জেনে খুশি হবেন যে
ফেসবুক লাইট ভার্সনেও স্টিকার ব্যবহার করা যায়।

শুধু মনে রাখতে হবে যে, আপনি স্ট্যান্ডার্ড মেসেঞ্জারের সাথে আসা GIF, ইমোজি এবং টেক্সট স্টাইল ব্যবহার
করতে পারবেন না। মেসেজিং এর ক্ষেত্রে এই অ্যাপটি কার্যকরী, তবে এটিকে দুর্দান্ত বলা যাবেনা।

নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা (Security and Privacy)

ফেসবুক অবশ্যই আপনার তথ্য জানতে চায়, এবং এবিষয়ে আপনি অবশ্যই নিশ্চিত হতে চাইবেন যে কোম্পানিটি
এইসব তথ্যগুলো অন্য সকলের কাছে হস্তান্তর করছে কিনা।

যারা প্রথমবার অ্যাপটি ব্যবহার করতে চলেছেন তাদের জন্য বলে রাখি, ফেসবুক-এর একটি অনলাইন টুল
রয়েছে যাতে আপনি আপনার প্রাইভেসি সেটিংস যাচাই করতে পারেন। কিন্তু একবার আপনি এটি করে ফেললে,
আপনার ডিভাইসে মোবাইল অ্যাপটি কী কী ব্যবহারের অনুমতি চাইছে তা দেখে রাখাটাও দরকারি।
এমনকি আপনি অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য টরের মাধ্যমেও ফেসবুক ব্রাউজ করতে পারেন।

তবে, কিছু মানুষ রেগুলার ফেসবুক অ্যাপের এই পারমিশনগুলিকে কিছুটা আক্রমণাত্মক বলে মনে করেন।
রেগুলার ফেসবুক অ্যাপে বায়োমেট্রিক হার্ডওয়্যার ব্যবহার করার, অডিও সেটিংস পরিবর্তন করার, গুগল প্লে-র
বিলিং পরিষেবাগুলি ব্যবহার করার এবং আপনার ব্লুটুথ ডিভাইসগুলির সাথে যুক্ত করার অনুমতি রয়েছে৷

মূলত, যদি রেগুলার ফেসবুক অ্যাপের পারমিশনগুলি আপনার জন্য খুব বিরক্তিকর মনে হয়, তাহলে ফেসবুক
লাইট-এর ক্ষেত্রেও হয়ত একই রকম মনে হবে। সেক্ষেত্রে, অনুমতি এড়াতে হলে আপনাকে আপনার পছন্দমত
অ্যান্ড্রয়েড ব্রাউজারের মাধ্যমে ফেসবুক-এর মোবাইল ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করতে হবে।

কিভাবে ফেসবুক লাইট অ্যাপ ডাউনলোড করবেন? (How to download Facebook Lite app)
আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ফেসবুক লাইট অ্যাপ ডাউনলোড করতে ফেসবুক লাইট ওয়েবসাইট বা গুগল প্লে
স্টোরে যান। আর, আইফোনে ফেসবুক লাইট অ্যাপ ইনস্টল করতে হলে অ্যাপ স্টোরে যান।

আমাদের শেষ কথা,

তাহলে বন্ধুরা, আজকের এই আর্টিকেলটির মধ্যে দিয়ে আমরা ফেসবুক লাইট অ্যাপটির বিষয়ে নানা তথ্য জানতে
পারলাম। অ্যান্ড্রয়েড বা আইফোন ব্যবহারকারীরা এবার সহজেই ফেসবুক লাইট ব্যবহার করে অনেকটা স্ট্যান্ডার্ড
ফেসবুক অ্যাপের মতই সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। আশা করি, ফেসবুক লাইট নিয়ে লেখা এই আর্টিকেলটি
আপনাদের ভালো লেগেছে।

যদি আমাদের লেখা আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি শেয়ার করে বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে
দিন। আর, আর্টিকেল সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে, নিচে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাদের জানান।

সৌমিক ঘোষ

About সৌমিক ঘোষ

সৌমিক ঘোষ একজন ইন্টারনেট মার্কেটিং প্রফেশনাল, ব্লগার। তিনি ইন্টারনেট মার্কেটিং এ প্রায় ১৪ বছর ধরে কাজ করছেন ।ব্লগিং ছাড়াও অবসর সময় এ গান শোনা তার একটি নেশা। | দেখুন LinkedIn প্রোফাইল

View all posts by সৌমিক ঘোষ →

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।