Last Updated on: 23rd জানুয়ারি 2022, 04:04 অপরাহ্ন
হ্যালো বন্ধুরা আজকের এই পোস্টে আমরা ১১টি অনলাইন ইন্টারভিউ টিপস সম্পর্কে বিশদে আলোচনা করব।
আজকের দিনে চাকরি পেতে হলে ইন্টারভিউ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অনেক চাকরিপ্রার্থী ঠিক এই ইন্টারভিউ দিতে গেলে সঠিক ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে উঠতে পারেন না যার কারণে বহুকাঙ্খিত চাকরির দোরগোড়া থেকেই তাদের বার বার ফিরে আসতে হয়। আর তার উপর যদি অনলাইন ইন্টারভিউ হয় তো ব্যাপারটি আরো জটিল হয়ে পড়ে।
আর বর্তমানে এই করোনা আবহে অনেক চাকরির ইন্টারভিউ অনলাইনে সংগঠিত হচ্ছে তাই চাকরি প্রার্থী হিসেবে অনলাইনে নিজের গুনাগুন সম্পর্কে ভালোভাবে জানিয়ে একটি ভালো অনলাইন ইন্টারভিউ কি ভাবে দেওয়া যায় সেই সম্পর্কেই আজকের এই আলোচনা।
প্রথাগত ইন্টারভিউ এর থেকে অনলাইন ইন্টারভিউ কিছুটা হলেও প্রযুক্তিনির্ভর তাই বিষয়ে টুকিটাকি জেনে রাখা এই অনলাইন ইন্টারভিউ তে চাকুরিপ্রার্থী কে অনেক সাহায্য করবে বলেই আমার বিশ্বাস।
তো চলুন শুরু করা যাক।
১. নিজেকে আসল ইন্টারভিউ এর মতোই প্রস্তুত রাখুন
প্রথম পয়েন্ট নিজেকে আসল ইন্টার্ভিউ এর মত প্রস্তুত রাখুন। অনলাইন ইন্টারভিউ যেহেতু ইন্টারনেট নির্ভর তাই এক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা স্কাইপ ,গুগল মিট বা অন্য কোন অনলাইন কনফারেন্সে সফটওয়্যার যেমন জুম্ (Zoom )ব্যবহার করে আপনার অনলাইন ইন্টারভিউ নিতে পারে। তাই প্রথমেই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।
কখনোই অনলাইন ইন্টারভিউ কে হালকা ভাবে নেবেন না তার কারণ চাকুরীদাতা ইন্টারভিউ অনলাইনে নিলেও আপনার থেকে সেরা উত্তরই প্রত্যাশা করেন তাই ইন্টারভিউ দেওয়ার আগে কোম্পানি সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন।
বিশেষ করে নিন কোম্পানির সব খুঁটিনাটি বিষয় যেমন এটা কবে শুরু হয়,বোর্ড অফ ডিরেক্টেটরস , অতীতের ট্র্যাক রেকর্ড, কোম্পানির মার্কেট পজিশন সম্পর্কেই ভালো করে আগে থেকে পড়াশোনা করে নিন। এইগুলি আপনাকে আপনার ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় অনেক সাহায্য করবে।
২. পোশাক-আশাকের প্রতি যত্নবান হোন
দুই নম্বর পয়েন্ট হলো পোশাক-আশাকের প্রতি যত্নবান হোন। আপনি অনলাইন ইন্টারভিউ দেন বা অফলাইন ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় পোশাক-আশাক যেন পরিষ্কার থেকে থাকে।
আপনি যদি ক্যাজুয়াল ড্রেস পড়ে ইন্টারভিউ দিতে বসে যান সেক্ষেত্রে চাকুরীদাতার মনে আপনার দায়বদ্ধতার প্রতি সন্দেহ দেখা দিতে পারে তাই চেষ্টা করবেন অনলাইন ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় সবসময় একটিভ ফরমাল পোশাক ব পরতে। দরকার হলে আপনি কয়েক বার ডেমো ইন্টারভিউ দিয়ে আপনার অনলাইন ইন্টারভিউ এর জন্য অভ্যাস করে নিতে পারবেন।
আরো পড়ুন :সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা কি
৩. ইন্টারনেট কানেকশন,ওয়েবক্যাম ঠিক রাখুন
এবারে আসি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় সম্পর্কে। অনলাইন ইন্টারভিউ ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তিনির্ভর। তাই অনলাইন ইন্টারভিউ সব সময় আপনার ইন্টারনেট কানেকশন আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলের ইন্টারনেট কানেকশন কোয়ালিটি ,মাইক্রোফোন সমস্ত কিছু আগে থেকে ঠিক করে রাখবেন যদি সম্ভব হয় তবে ভালো ইন্টারনেট কানেকশন পাওয়া যায় এমন কোন ইন্টারনেট কানেকশন ব্যাবহার করে আপনি আপনার অনলাইন ইন্টারভিউ দেবেন।
কারণ অনেক সময় দেখা যায় আপনার বাড়িটা নেট কানেকশন বা মোবাইলে ইন্টারনেট কানেকশন চলাকালীন নানা কারণে বিঘ্নিত হয় তাই এক্ষেত্রে অনলাইন ইন্টারভিউ চলাকালীন অনেক সমস্যা দেখা দেয়। তাই আপনার ইন্টারনেট কানেকশনের প্রতি যথেষ্ট সতর্ক হতে হবে।
এছাড়াও যদি ভিডিও ইন্টারভিউ হয় ক্ষেত্রে আপনার ওয়েবক্যামটিকেও একবার আগে থেকে ঠিক করে দেখে নেয়া উচিত কারণ ভিডিও ইন্টারভিউয়ের সময় যদি আপনার ওয়েবক্যাম ঠিকঠাক কাজ না করে তো উল্টো প্রান্তের ইন্টারভিউ যিনি নিচ্ছেন সে আর আপনাকে দেখতে পাবেন না সেক্ষেত্রে আপনার ইন্টারভিউ গ্রাহ্য হবে না।
৪. ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় জায়গা বাকি শান্ত ঘর বেছে নিন
ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় একটি শান্ত ঘর বেছে নিন। অনেক সময় অনলাইন ইন্টারভিউ দেয়ার সময় অনেক শব্দ কোলাহল চলতে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি ইন্টারভিউইয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর ঠিকমত শুনতে পান না।
তাই সে ক্ষেত্রে আপনার উত্তর সঠিকভাবে পৌঁছে দেয়ার জন্য আপনার একটি শান্ত নিরিবিলি ঘর প্রয়োজন যেখানে বাহ্যিক কোন গোলমাল থাকবে না. এছাড়াও সব সময় পারলে ন্যাচারাল লাইট ব্যবহার করবেন যাতে করে আপনার প্রতিচ্ছবি বা ভিডিও সুন্দরভাবে অন্য প্রান্তের চাকুরীদাতার কাছে পৌঁছে যায়। দরকার হলে সেলফি রিং কিংবা মোবাইল হোল্ডার ব্যবহার করে আপনি আপনার ভিডিও ইন্টারভিউ দিতে পারেন।
এছাড়া অনলাইন ইন্টারভিউ দেবার সময় সবসময় সোশ্যাল মিডিয়া নোটিফিকেশন ,মেসেন্জার বন্ধ করে রাখবেন যাতে করে আপনি শান্ত মনে ইন্টারভিউ শেষ করতে পারেন।
৫.সঠিক ভাবে ক্যামেরা এর সামনে বসুন
আপনার বসার জায়গা নির্বাচন অনলাইন ইন্টারভিউ তে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যখন আপনি ইন্টারভিউ দিবেন তো লক্ষ্য করবেন যে আপনি যেন ক্যামেরার খুব কাছে বা ক্যামেরা থেকে খুব দুরে না বসেন। আপনার দূরত্ব ক্যামেরা থেকে এমন হওয়া উচিত যাতে আপনার অবয়বটি বিশেষ করে মুখমন্ডল থেকে বুক পর্যন্ত সুন্দরভাবে ক্যামেরা তে উঠে আসে।
তাছাড়া সরাসরি আই কন্টাক্ট এ কথা বলুন যখন আপনি অনলাইনে ইন্টারভিউ দেবেন তখন সরাসরি চাকরিদাতার বা চোখের দিকে চেয়ে কথা বলুন আপনি যদি অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলেন সে ক্ষেত্রে চাকুরীদাতা আপনাকে অমনোযোগী ভাবতে পারে তাই সব সময় চেষ্টা করবেন যাতে প্রযুক্ত চলাকালীন সব সময় ওয়েব ক্যামের দিকে আপনার চোখ থাকে।
৬. ইন্টারভিউ এর অন্তত ১০ মিনিট আগে রেডি হয়ে নিন
ইন্টারভিউয়ের অন্তত ১০ মিনিট আগে আপনি প্রস্তুত হয়ে যান। অনেক সময় কি হয় অনলাইন ইন্টারভিউ বলে আমরা ঠিক ওই সময় ইন্টারভিউ দিতে বসে পড়ি।
যদি আমরা ইন্টারভিউ এর সঠিক সময়ের ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে থেকে ইন্টারভিউয়ের জন্য বসে পড়ি সে ক্ষেত্রে আমাদের মাইক, মাইক্রোফোন, ক্যামেরা এইগুলি চেক করে নেয়ার জন্য কিছু অধিক সময় পাওয়া যায় তাই কোন আপৎকালীন অসুবিধা থাকলে আমরা ওই সময়ের মধ্যেই আমরা মিটিয়ে নিতে পারি তাই সবসময় এটি বলা হয় যে আসল ইন্টারভিউয়ের অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে আপনাকে আপনার ইন্টারভিউ সেটআপ এর সামনে বসে যেতে হবে।
৭. ডিজিটাল হ্যান্ডশেক’র ওপর জোর দিন
যখন আমরা আসল ইন্টারভিউ দিতে চাই তখন কোন ইন্টারভিউ শুরু এবং শেষ করার সময় আমরা ইন্টারভিউ যিনি নিচ্ছেন তাকে সঠিক ভাবে সম্বোধন করি। সেটি hi হ্যালো হতে পারে ,করমর্দন কিংবা নমস্কার প্রতি নমস্কার হতে পারে।
কিন্তু ডিজিটাল অনলাইন ইন্টারভিউ তে সেই সুবিধা নেই তাই সে ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ শুরু হওয়ার সময়ই আপনাকে আপনার ইন্টারভিউ ইন্টারভিউ আর এর সাথে ফর্মাল হাই-হ্যালো করে নিতে হবে। এটি আপনার সৌজন্যে বোধকে ভালো ভাবে তুলে ধরবে আর এবং সেক্ষেত্রে আপনার ইন্টারভিউ বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ এর মধ্যেই সম্পন্ন হবে।
৮. সব প্রশ্ন শোনার অভ্যাস করুন
এছাড়াও অনলাইন ইন্টারভিউ দেয়ার সময় সবসময় আগে আপনার ইন্টারভিউ যিনি নিচ্ছেন তিনি সঠিকভাবে কি বলতে চাইছেন সম্পূর্ণভাবে শুনুন। অনেক সময় কি হয় আমরা উত্তেজনার বশে সকল প্রশ্ন না শুনেই আমরা উত্তর দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি এই রকম ব্যবহার করলে অন্য প্রান্তে থাকা মানুষটি আপনার প্রতি আস্থা হারাবে তাই সবসময় উচিত আপনার চাকুরীদাতার সকল প্রশ্নের মনোযোগ সম্পর্কে শোনা। প্রশ্ন শোনা হয়ে গেলে আপনি আপনার মত সাজিয়ে গুজিয়ে উত্তর দিন।
৯. ইন্টারভিউ দিতে লম্বা সময়ের বিরতি নেবেন না
অনলাইন ইন্টারভিউ দেবার সময় লম্বা সময়ের বিরতি নেবেন না। অনলাইন ইন্টারভিউ দেবার ওমর আপনার আপনার কিছুটা বিরতি যদি নিতে হয় তো এই বিরতি নিতে হলে সবসময় আগে থেকে আপনি আপনার চাকরিদাতার অনুমতি নিয়ে নেবেন। মনে রাখবেন চাকরিদাতারা অনেক ব্যাস্ত থেকেন তাকে হয়তো আরো অনেক ইন্টারভিউ নিতে হবে তাই যত সময় কম অপচয় করা যায় ততই ভালো।
১০.সবসময় কাগজ কলম হাতের কাছে রাখুন
অনলাইন ইন্টারভিউ হলেও এমন অনেক কিছু বিষয় থাকতে পারে যার কিছু নোটস নেওয়া আপনার অনলাইন ইন্টারভিউ এর সময় বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে।
তাই এক্ষেত্রে যদি আপনি আপনার হাতের কাছে একটি পেন এবং কলম থাকে তো কোন গুরুত্বপূর্ণ নোটস আপনি সেখানে টুকে নিতে পারবেন যা পরবর্তীকালে আপনাকে এই নোটগুলি আপনার অনেক সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও আপনার সমস্ত এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশন ডকুমেন্টস, আরো প্রয়োজনীয় নথি ওই অনলাইন ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় আপনার পাশে রাখা উচিত।
আপনি আপনার বায়ো ডাটা তে সমস্ত কিছু আগে থেকে উল্লেখ করেছেন তবু কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এগুলি আপনার বায়ো ডাটা তে উল্লেখ নেই সেগুলি যদি ইন্টারভিউআর এই মুহূর্তে জিজ্ঞাসা করে সেক্ষেত্রে আপনি সহজেই সেই প্রশ্নের উত্তরগুলো দিতে পারবেন।
তাই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সবসময় নিজের হাতের কাছে রেখে দেয়া উচিত।
১১. ঘরের সিলিং ফ্যান অফ রাখুন
শুনতে অদ্ভুত লাগলেও ঘরের সিলিং ফ্যান চললে অনেক সময় তার শব্দে অনেক কিছু শোনা যায় না। এটা কি ছোট বিষয় তবু ইটা বলা দরকার। পারলে অনলাইন ইন্টারভিউ দেবার সময় এটি অফ রাখুন। ঘরে যদি এসি থাকে এটি চালিয়ে দিন যার ফলে কোন অবাঞ্চিত শব্দ আপনার অনলাইন ইন্টারভিউ কে খারাপ করতে পারবে না। এছাড়া হাতের কাছে পানীয় জল রাখুন।
অনলাইন ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় অনেকসময় একটানা অনেকক্ষণ কথা বলতে হয় তাই এক্ষেত্রে আপনার কথা বলার সময় কোন সমস্যা হলে আপনি অনুমতি নিয়ে কিছুটা জল পান করে নি যার ফলে আপনার কথা বলতে অনেক সুবিধা হবে।
শেষ কথা : আশা করি আপনার ১১টি অনলাইন ইন্টারভিউ টিপস অনেক কাজে দেবে। আপনি এই বিষয়ে কি মনে করেন? নিচের কমেন্ট বাক্স এ কমেন্ট করতে ভুলবেন না।