ল্যাপটপ চালানোর নিয়ম:১৪টি ল্যাপটপ রক্ষণাবেক্ষণের সহজ উপায়

ল্যাপটপ চালানোর নিয়ম

Last Updated on: 12th সেপ্টেম্বর 2021, 06:48 পূর্বাহ্ন

আপনি কি ল্যাপটপ কিভাবে চালাতে হয় জানতে চাইছেন ?

হ্যালো বন্ধুরা আজকে আমাদের এই পোস্টে আমরা সঠিক ল্যাপটপ চালানোর নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব।

ল্যাপটপ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক ডিভাইস হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু আইটি প্রফেশনাল ,ডিজিটাল মার্কেটিং নয়,ল্যাপটপ বর্তমানে গৃহবধূ থেকে শুরু করে স্টুডেন্ট ,বিভিন্ন বিজনেসম্যান ,শপিং মল, দোকান ইত্যাদি সব জায়গাতেই আজকাল ল্যাপটপ ব্যবহার হয়ে থাকে।

Statistica, এর তথ্য হিসাবে,২০২০ সালে সারা বিশ্বজুড়ে শুধু ল্যাপটপ বিক্রি হয়েছে ১৫০ মিলিয়ন ! সংখ্যাটা সত্যি অসাধারণ।

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো আমরা অনেকেই জানিনা ল্যাপটপ কিভাবে ব্যবহার করতে হয়।

একটা দামি ল্যাপটপ কেনার পর তার রক্ষণাবেক্ষনসমান ভাবে জরুরি।অনেক সময় সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ল্যাপটপ খারাপ হয়ে যায়।

তো আজকে আমাদের এই পোস্টে আমরা জানাবো কিভাবে আমরা আমাদের ল্যাপটপটিকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করব।
তো আসুন শুরু করা যাক।

ল্যাপটপ চালানোর নিয়ম

১. ল্যাপটপ সবসময় হালকা রাখুন

আমাদের ল্যাপটপটিকে সব সময় হালকা হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু দেখা যায় অনেক সময়ই আমরাই ল্যাপটপের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় সিডি ,ডিভিডি ইত্যাদি যেগুলি কোন প্রয়োজনে লাগে না সেগুলো অযথা ড্রাইভ এর মধ্যে রেখে দি। এতে আমাদের ল্যাপটপটি ভারী হয়ে যায়।

তাই আমাদের পরামর্শ এই সমস্ত অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ল্যাপটপ থেকে খুলে রাখা।

২.অতিরিক্ত তাপমাত্রা থেকে ল্যাপটপটি দূরে রাখুন

অতিরিক্ত তাপমাত্রা আমাদের ল্যাপটপের জন্য একটি খারাপ সংকেত। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে ল্যাপটপের ব্যাটারি, বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ পার্টস খারাপ হতে পারে। তাই যখন অতিরিক্ত তাপমাত্রা থাকবে সে ক্ষেত্রে ল্যাপটপ কুলিং প্যাড ব্যবহার করা উচিত। এমন একটি জায়গায় ল্যাপটপটি রেখে দেওয়া উচিত যেখানে অতিরিক্ত তাপমাত্রা পৌঁছাতে না পারে।

৩.ল্যাপটপের স্ক্রিন সাবধানে পরিষ্কার করুন

ল্যাপটপের স্ক্রিন একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর অংশ। ল্যাপটপ স্ক্রিন পরিষ্কার করার সময় আমাদের মাথায় রাখতে হবে যাতে স্ক্রিনটি সঠিক ভাবে পরিষ্কার করার জন্য বিভিন্ন রকম ল্যাপটপ ক্লিনিং সলিউশন পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করা উচিত।অযথা ঘষাঘষি করলে স্ক্রিনের উপর স্ক্রাচ পরে যাবার আশঙ্কা থাকে।

৪.শক্তিশালী ম্যাগনেটিক ফিল্ড থেকে ল্যাপটপ দূরে রাখুন

ল্যাপটপ যেহেতু একটি স্পর্শকাতর যন্ত্র,অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্র যেগুলি শক্তিশালী ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করে যেমন টেলিভিশন ,রিফ্রেজেটর এই সমস্ত যন্ত্র গুলিকে ল্যাপটপটিকে দূরে রাখা উচিত। এই সমস্ত যন্ত্রগুলো থেকে নির্গত হওয়া ম্যাগনেটিক ফিল্ড ল্যাপটপের আভ্যন্তরীণ পার্টস খারাপ করে দিতে পারে।

৫. কাজ না থাকলে ল্যাপটপটি বন্ধ রাখুন

শুনতে হাস্যকর লাগলেও ইটা সত্যি যে অনেক সময়ে কাজ না থাকলেও আমরা অকারণে ল্যাপটপটি চালিয়ে রাখি।ল্যাপটপটি যখন প্রয়োজন না থাকে তখন সেটি ভালোভাবে বন্ধ করে রাখা উচিত কারণ অনেক সময় ল্যাপটপ ব্যবহার করার পর স্ক্রিন বন্ধনা করলে ধুলাবালি ল্যাপটপটি স্ক্রিন এবং অভ্যন্তরীণ অংশে ঢুকে সেটি খারাপ করতে পারে তাই এ বিষয়ে সতর্ক তাকে উচিত ।

৬. উপযুক্ত ভেন্টিলেশন বাবস্থা

ল্যাপটপটি যেহেতু একটু ঊচ্চক্ষমতা সম্পন্ন যন্ত্র ,তাই এর থেকে প্রচুর তাপ নির্গত হয়। তাই ল্যাপটপএমন জায়গায় রাখা উচিত যেখানে উপযুক্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা রয়েছে। কখনোই ল্যাপটপটিকে কোন বালিশ ,সোফা তে রেখে কাজ করা উচিত নয়। এতে ভেন্টিলেশন এর ব্যাঘাত ঘটে। ল্যাপটপ সবসময় এমন জায়গাতে রাখা উচিত যেখানে আলো-বাতাস চলাচল করে।

৭. ল্যাপটপ ব্যাগ ব্যাবহার করুন

একটি ভালো ল্যাপটপ যখন আমরা কিনি তখন অনেক সময়ই কোম্পানি থেকে একটি ল্যাপটপ ব্যাগ দয়া হয়। আপনি যখন বাইরে যাবেন তখন ঐ ল্যাপটপের ব্যাগ টি ব্যাবহার করবেন ল্যাপটপটি বহন এর জন্য। যদি আপনাকে ফ্রি ব্যাগ দেওয়া না হয় তো বাজার থেকে একটি ভালো ল্যাপটপ ব্যাগ কিনে সেটি আপনি ল্যাপটপ বহনের জন্য ব্যবহার করবেন। কখনোই ল্যাপটপটিকে খালি হাতে অন্য কোনভাবে বহন করা উচিত নয়।

আরো পড়ুন :ল্যাপটপ কি ,ল্যাপটপ দিয়ে কি কি কাজ করা যায় ,ল্যাপটপ এর সুবিধা অসুবিধা

৮.পাসওয়ার্ড প্রটেকশন

পাসওয়ার্ড প্রটেকশন আমাদের ল্যাপটপটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আমাদের অনেক পার্সোনাল জিনিস ,ফাইল,ফোল্ডার ,অফিসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট ইত্যাদি থাকে তাই ল্যাপটপ সবসময় পাসওয়ার্ড প্রোটেক্ট রাখা উচিত। ভাল পাসওয়ার্ড দিয়ে আপনার ল্যাপটপটি প্রোটেক্টেড থাকলে অনেক সময় ডাটা চুরি থেকে আপনার ল্যাপটপটি রক্ষা পায়।

৯. ভালো এন্টিভাইরাস ব্যবহার

আপনার ল্যাপটপটিতে ভালো একটি এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা জরুরি। যেহেতু ল্যাপটপ বেশিরভাগ ইন্টারনেটে কাজে ব্যবহার করা হয় ভালো এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করা আবশ্যক। ইটা মনে রাখা দরকার যে আপনি যে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যাবহার করবেন সেটি যেন সবসময় আপডেটেড থাকে।আপডেটেড না থাকলে নতুন ভাইরাস আপনার ল্যাপটপটির জন্য মারাত্মক হতে পারে।

আপনি যদি উইন্ডোস ব্যাবহার করেন তবে ফ্রি এন্টিভাইরাস এর মধ্যে Avast ফ্রি এন্টিভাইরাস ব্যাবহার করতে পারেন।এছাড়া পেইড এন্টিভাইরাস ব্যাবহার করতে চাইলে আপনি Kaspersky এন্টিভাইরাস টি দেখতে পারেন। বাংলাদেশে আপনি এটি TK 1,099 তে পেয়ে যাবেন।

১০. ভালো ভিপিএন ব্যবহার

আপনার ল্যাপটপটিতে একটি ভালো ভিপিএন ব্যবহার করা উচিত। বিভিন্ন জায়গাতে যখন আপনি ল্যাপটপটি ব্যবহার করেন অচেনা জায়গায় ইন্টারনেট কানেকশন ব্যাবহার করার সময় যেমন হোটেল এয়ারপোর্টে তখন একটি ভালো প্রাইভেট ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন আপনার সুরক্ষা নিশ্চিত করে।

১১. অরিজিনাল অপারেটিং সিস্টেম ব্যাবহার

যখন আমরা ল্যাপটপ কিনি তখন কিন্তু অনেক সময়ই আমরা খরচের ভয়ে অরিজিনাল অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার না করে পাইরেটেড ভার্সন ব্যবহার করি। কিন্তু দীর্ঘকালীন সময়ের জন্য এর অনেক ক্ষতিকারক দিক আছে।

তাই আমাদের পরামর্শ হচ্ছে আপনি যখন কোনো নতুন ল্যাপটপ কিনবেন তখন একটি অরিজিনাল ভার্সন এর আসল উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করবেন। এছাড়া যদি আপনি খরচ বাঁচাতে চান, তো বাজারে প্রচলিত লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম আপনি ফ্রিতে ব্যবহার করতে পারেন।

জনপ্রিয় লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমগুলোর মধ্যে রয়েছে উবুন্তু ,মিন্ট লিনাক্স ইত্যাদি। লিনাক্স ব্যবহার করার আরেকটি সুবিধা হল লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে এর থেকে বেশি নিরাপদ। তাই আপনি চাইলে ফ্রিতে লিনাক্স আপনার ল্যাপটপে ব্যাবহার করতে পারেন।

১২. সঠিক ল্যাপটপ চার্জিং

সঠিক ল্যাপটপ রক্ষণাবেক্ষণ এর জন্য সঠিকভাবে ল্যাপটপ চার্জিং একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সবসময় ল্যাপটপটিকে ৪০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ চার্জ এই সীমার মধ্যে রাখা উচিত।

তাই যখনই আপনার ল্যাপটপ এই সীমার বাইরে যায় তখনই আপনি ল্যাপটপকে চার্জে বসিয়ে দিন।

১৩. ডিস্ক ইউটিলিটি প্রোগ্রাম

অনেক সময় আমাদের ল্যাপটপ টি অনেকদিন ব্যবহার করার পর ল্যাপটপের হার্ডডিস্ক এর মধ্যে অনেক সময় অবাঞ্চিত ফাইল ,ফোল্ডার থেকে যায় যেগুলো আমাদের ল্যাপটপটির গতি অনেক শ্লথ করে দেয়। তাই আমাদের উচিত সময়ে সময়ে এই অবাঞ্চিত ফাইল ফোল্ডার গুলি আমাদের ল্যাপটপ থেকে ডিলিট করে দেয়া। এই কাজের জন্য আমাদের একটি ভালো ডিস্ক ক্লিনার ব্যবহার করা দরকার।

উইন্ডোস এর জন্য এইরকমই একটি সফটওয়্যার হলো সি সি ক্লিনার। এটি একটি ফ্রী সফটওয়্যার তাই আপনি সহজেই সি সি ক্লিনার সফটওয়্যারটি আপনার ল্যাপটপে ইন্সটল করে এই অবাঞ্চিত ফাইল গুলিকে ডিলিট করে আপনার ল্যাপটপের গতিকে বাড়িয়ে নিতে পারেন।

আপনি যদি লিনাক্স ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনার জন্য সুইপার ,সাইন্যাপটিক প্যাকেজ ম্যানেজার, আদর্শ হতে পারে।

১৪. এসএসডি ব্যবহার

এসএসডি বা সলিড স্টেট ড্রাইভ , প্রথাগত হার্ডডিস্ক এর চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী যদি আপনার ল্যাপটপটিকে একটু এডভান্স লেভেলে ব্যাবহার করতে চান তো আপনি আপনার ল্যাপটপের হার্ডডিস্ক টি এসএসডি তে পরিবর্তন করুন। এসএসডি ড্রাইভ, এটির read-write ক্ষমতা সাধারণ হার্ডডিস্ক এর চেয়ে অনেকগুণ বেশি।

আপনি যখন আপনার অপারেটিং সিস্টেমটি বুট করেন তখন নিমেষের মধ্যে ওপেন হয়ে যায়। অন্য দৈনন্দিন কাজ যেমন ব্রাউসিং,এডিটিং এ সমস্ত ক্ষেত্র এসএসডি আপনার ল্যাপটপের গতি অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। এসএসডি যেহেতু কোনো মুভি পার্ট ব্যাবহার করে না তাই এটি আপনার ল্যাপটপের ব্যাটারি সংরক্ষণে প্রভূত সাহায্য করে।

আপনি যদি আপনার ল্যাপটপে এসএসডি ব্যবহার করতে চান তো মোটামুটি ভাবে ৩ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে একটি ভালো মানের এসএসডি পেয়ে যাবেন। ভালো এসএসডি ব্র্যান্ডের মধ্যে হলো ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল, কিংস্টন উল্লেখযোগ্য।

শেষ বক্তব্য :

তো আশা করি আপনাদের ল্যাপটপ সংরক্ষণ বা ল্যাপটপ চালানোর সঠিক নিয়ম এই পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। এই পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তো দয়া করে পোস্টটি সকলে শেয়ার করবেন। আপনাদের যদি আরো কিছু ল্যাপটপ সংরক্ষণের ব্যাপারে জানার থাকে তো নিচে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।

শুভ্রজ্যোতি ঘোষ

About শুভ্রজ্যোতি ঘোষ

শুভ্রজ্যোতি ঘোষ একজন স্টুডেন্ট এবং টেক লাভার। গণিতে সে বি. এস. সি স্নাতক। পড়াশোনা ছাড়াও বাংলা কবিতা,গান শুনতে সে ভালোবাসে। তাছাড়াও ব্লগ লিখতে সে ভালোবাসে বিশেষত বাংলাতে।

View all posts by শুভ্রজ্যোতি ঘোষ →

2 Comments on “ল্যাপটপ চালানোর নিয়ম:১৪টি ল্যাপটপ রক্ষণাবেক্ষণের সহজ উপায়”

  1. কম্পিউটারের টুকটাক ফিক্সিংসহ সবসময় নতুনের মতো পারফরমেন্স পেতে অবশ্যই পিসি টিউন-আপ সুবিধা আছে এমন অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা উচিত। অনলাইনে বিভিন্ন ফ্রি টিউন-আপ পাওয়া গেলেও এসবের কোনটিই সম্পূর্ণ টিউন-আপ সুবিধা দেয় না বলে তা দিয়ে স্ক্যানিং করা উল্টো ক্ষতির কারণ ডেকে আনতে পারে। ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার থেকে সুরক্ষার পাশাপাশি কম্পিউটারের উন্নত পারফরমেন্স পেতে বাজার থেকে দেখে-শুনে, যাচাই করে ভালো মানের কোনো অ্যান্টিভাইরাসের লাইসেন্সড ভার্সন ব্যবহার করা উচিত।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।