Last Updated on: 28th আগস্ট 2021, 05:56 পূর্বাহ্ন
হ্যালো বন্ধুরা আজকে আমরা অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলাফল সম্পর্কে বিশদে আলোচনা করব। আজকাল মোবাইল ফোন দৈনন্দিন যোবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ছোটখাটো টেক্সট মেসেজিং থেকে শুরু করে মিটিং, ভিডিও কল, এসএমএস, মুভি দেখা, ভিন্ন রকম গেম ডাউনলোড করা ও নানা কারণে আমরা ২৪ ঘন্টা সময়ই মোবাইলকে আমাদের কাছে রাখতে পছন্দ করি।
মোবাইল ছাড়া আমাদের জীবন দুঃসহ মনে হয় কিন্তু এই অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে আমাদের মানসিক ও শারীরিক ভাবি নানারকম ক্ষতির মুখে পড়তে হয় আজকে আমাদের এই পোস্টে আমরা অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকারক ফলাফল সম্পর্কে বিশদে আলোচনা করি।
তো আসুন শুরু করা যাক। University of Gothenburg এর হিসেব অনুযায়ী অতিরিক্ত স্মার্ট ফোন ব্যবহার করলে আমাদের নানা রকম ঘুমের সমস্যা হতে শুরু করে। মুসলিম হতে পারে আসুন এবার দেখি নি অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে আমাদের আসলে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
সূচিপত্র
মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর দিক
১. টেক নেট
টেক নেট ব্যাপারটা শুনতে নতুন হলেও এটি মূলত ঘাড়ের এবং মেরুদন্ড তথা শিরদাঁড়ার ব্যথার অনুভূতি এর একটি নাম।
অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলাফল হিসাবে আমরা সবসময় মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে ঝুঁকে নিজের দিকে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে যাই।
এর ফলে আমাদের শিরদাঁড়ার ও ঘাড়ের কাছে অতিরিক্ত ব্যথার অনুভূতি হয় মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ফলে এটি একটি সাধারণ সমস্যা।
২.অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি
একটানা কোন মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ফলে আমাদের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির একটি সম্ভাবনা থেকেই যায়। ইউনিভার্সিটি অফ গ্রানাডা গবেষণা অনুসারে অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে আমাদের শরীরে গ্রেলিং এবং লেপটিন (ghrelin and leptin) নামে দুটি হরমোনের কার্যকারিতা হাস পায় যার ফলে আমাদের শরীরে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পায় ।
তাছাড়াও শুধু ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে ফোনের স্ক্রিন থেকে যে আলো বিচ্ছুরিত হয় তার দরুন আমাদের ঘুমের অনেক বাঘ্যাৎ ঘটে তাই এখন থেকেই আপনি ঘুমাতে যাওয়ার আগে এটি নিশ্চিত করুন যে আপনি আপনার মোবাইলটিকে সম্পূর্ণ সুইচ অফ করে রাখতে পারবেন।এছাড়া অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যাবহার করলে রেডিয়েশনের থেকে যা সমস্যা হয় সেটা তো আছেই।
৩. একাগ্রতার অভাব
মাল্টিটাস্কিং এবং অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের করার ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একাগ্রতার অনেক অভাব ঘটে। Microsoft-এর একটি গবেষণা থেকে যাচ্ছে যে বর্তমানে সাধারণ মানুষ মোবাইল স্ক্রিনে মাল্টিটাস্কিং নিয়ে অভ্যস্ত তাদের ক্ষেত্রে গড়পড়তা অ্যাটেনশন স্পেন্ট মাত্র ৮ সেকেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে যেটি একটি গোল্ডফিশের অ্যাটেনশন স্পেন্ট এর থেকেও কম।
২০০০ এর আগে যখন মোবাইল ফোন এতটা প্রভাবশালী ছিলনা তখন একটি গড়পড়তা মানুষদের এটেনশন স্প্যান ছিলো ১২ সেকেন্ড। তাই অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে আমাদের যে একাগ্রতার অভাব ঘটে এটি কিন্তু বর্তমানে বেশ উঠে আসছে যেটি বেশ আশঙ্কার।
৪. মস্তিষ্ক গঠনের পরিবর্তন
ঘুমের ব্যাঘাত এর সঙ্গে অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ফলে অনেক বিশেষজ্ঞ মস্তিষ্কের গঠন এর পরিবর্তন ও উল্লেখ করেছেন যা বেশ চিন্তার। PLoS One এর একটি গবেষণাপত্র অনুযায়ী যারা মাল্টিমিডিয়ার টাস্কিং এ অনেক সময় ব্যয় করেন মোবাইলে তাদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের গ্রে মেটার এর পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম থাকে যার ফলে তাদের মধ্যে অনুভূতি এর অনেক অভাব ঘটে।
আরো পড়ুন:RAM কি? RAM এর কাজ কি?
৫. স্বাধীন চিন্তার জন্য বাঘ্যাৎ
অতিরিক্ত অনলাইন মিডিয়ায় আসক্ত মানুষদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা বা নতুন কিছু চিন্তা করার ক্ষেত্রে কিছু বাধার সম্মুখীন হতে হয়। বর্তমানকালে Dartmouth এর ঘোষণাপত্র অনুসারে ছাপানো বই যারা পড়েন তাদের স্বাধীনভাবে চিন্তাধারার ভাবনা করার ক্ষমতা অনেক বেশি ডিজিটাল রিডার এর থেকে। ডিজিটাল মিডিয়া তে সারাক্ষন নানা বিজ্ঞাপন মানুষকে কিছুটা হলেও বিভ্রান্ত করতে পারে।
৬. গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা
কার অ্যাক্সিডেন্ট ন্যাশনাল সেফটি কাউন্সিল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তে যত দুর্ঘটনা ঘটে তা ২৭% অংশই ফোন ব্যবহার করার জন্য দায়ী ।এটি স্মার্টফোনের ক্ষতিকর দিক হিসাবে অন্যতম। স্মার্টফোনের ক্ষতিকর দিকতাই মোবাইল ফোন ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে যদি আপনি ড্রাইভিং করেন সেক্ষেত্রে আপনার অতিরিক্ত সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
৭. চোখের সমস্যা
আপনি যদি অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন একটানা তো আপনার চোখে অতিরিক্ত চাপ পড়ে যার ফলে আপনার দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে তাই অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার আগে আপনাকে এই বিষয়টা উপর সর্বদা নজর রাখতে হবে। এই সমস্যা এর সমাধানের সবচেয়ে ভালো উপায় হল নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাতে চোখের উপর একটানা চাপ না পড়ে।
৮. শ্রবণজনিত সমস্যা
আমরা অনেকেই দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল এ হেডফোন বা ইয়ারফোনে লাগিয়ে গান শুনি। কিন্তু ইটা একদম ভালো ব্যাপার নয়। একটানা অনেকক্ষণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে উচ্চস্বরে গান শুনলে, সেক্ষেত্রে আপনার শ্রবণশক্তির ক্ষতি হতে পারে তাই সবসময় উচিত যে অতিরিক্ত ভলিয়্যুমে হেডফোন বা এয়ার ফোন ব্যবহার না করা।
৯.আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি
একটানা অনেকক্ষণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে অন্যান্য মানসিক সমস্যার সাথে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। শুনতে অবাক লাগলেও সত্য যে ৪৮ শতাংশ মানুষ যারা দিনে ৫ ঘণ্টার বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন তাদের আত্মহত্যার প্রবণতা আরো অন্যান্য মানুষের চেয়ে অনেক বেশি।
এর কারন হিসাবে বলা যেতে পারে যে ইন্টারনেট এ অনেক ভালো বিষয়ের সাথে সাথে অনেক সময় সময় উস্কানিমূলক নানারকম বিষয় থাকে যেগুলি মানুষ তথা টিনএজারদের বিশেষ করে মনে রেখাপাত করে যার ফলে তাদের মধ্যে একাকীত্ব এবং আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় তাই এক্ষেত্রে সমাধান হলো অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া এবং মোবাইল ফোন ব্যবহার এড়িয়ে চলা দরকার।
আরো পড়ুন :সামাজিক নেটওয়ার্ক এর সুফল ও কুফল
১০. রোগ জীবাণু সংক্রমণ
আপনি কি জানেন আপনার মোবাইল ফোনটি কতটা অপরিচ্ছন্ন ? Seattle Times জার্নালিস্ট Bobby Caina Calvan এর মতে আপনার মোবাইলের প্রতি স্কয়ার ইঞ্চি তে ২৫ হাজার ১২৭ টি ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যেটি আপনার ব্যাবহার করা অন্যান্য বস্তুর থেকে অনেকগুন নোংরা।
তাই এই সমস্ত রোগ জীবাণু সহজেই আপনার দৈনন্দিন ব্যবহারের ফলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে তাই আপনার মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করার আগে দরকার পড়লে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুতির কাপড়ের সাহায্যে মোবাইল ফোনটি বারবার পরিষ্কার করুন । এছাড়াও মোবাইল ফোন ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন যার ফলে আপনার মোবাইল ফোনটি পরিষ্কার থাকে .
১১. সেলফোন এলবো
আপনি যদি আপনার মোবাইল ফোনটি কে অতিরিক্ত ব্যবহার করেন আপনার টানেল সিনড্রোম এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় যাকে অনেকে সেলফোন এলবো নামেও বলে থাকেন। একটানা মোবাইল ফোন ব্যবহার করার পরিবর্তে আপনি বারেবারে আপনার মোবাইলটিকে আপনার অন্য হাতে রেখে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে এটি অনেকটা উপকারে আসে।
১২. সড়ক বা রেল দূর্ঘটনা
অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যাবহার করলে যে শুধু যে গাড়ি চালানোর সময় যে আপনি জড়িয়ে পড়তে পারেন তাই নয় যদি আপনি অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন এবং অন্যমনস্কভাবে রাস্তা বা রেল লাইন পারাপারের সময় আপনি দূর্ঘটনা এর মুখে পড়তে পারেন। আমাদের ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গে ,বাংলাদেশ সহ বিশ্বের নানা দেশে এই প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে।
১৩. Daredevil ভিডিও সেলফি
এছাড়া বর্তমানে ডেয়ারডেভিল ভিডিও সেলফি তোলার একটি মারাত্মক প্রবণতা বেড়েছে।এর একটি কারণ হলো মোবাইল ফোন এর সহজলোভ্যতা। বর্তমানে অনেক মানুষ বিশেষ করে যুবক যুবক সমাজের মধ্যে ডেয়ারডেভিল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিভিন্ন টিভি রিয়্যালিটি শো এর জন্য অনেকটা দায়ী। অনেকেই এই সব ডেয়ারডেভিল ভিডিও সেলফি বানিয়ে রাতারাতি প্রচার আর বিখ্যাত হতে চায়।
কিন্তু বর্তমানে এরকম ডেয়ারডেভিল ভিডিও এবং সেলফি বানাতে গিয়ে বাংলাদেশ তথা ভারতে সময় বহু মানুষের প্রাণ অচিরেই চলে যাচ্ছে।এর সমাধান হলো সতর্কতা আর নিজের বোধবুদ্ধির ব্যাবহার করা।
আপনি আপনার মোবাইল ফোনটি কে ভালো কাজে কোন ক্রিয়েটিভ কাজে ব্যবহার করুন। শুধুমাত্র রাতারাতি ডেয়ারডেভিল ভিডিও বানানোর জন্য যদি আপনি আপনার মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করেন তবে সেক্ষেত্রে আপনার বিপদের সম্ভাবনা সমূহ তাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করুন সতর্কভাবে।