কন্যাশ্রী প্রকল্প কি ?কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা

Last Updated on: 29th আগস্ট 2024, 12:17 অপরাহ্ন

বন্ধুরা, আসুন আজকে আমরা জেনে নিই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি অসাধারণ প্রকল্পের ইতিবৃত্ত কন্যাশ্রী
(Kanyashree) প্রকল্প সম্পর্কে। আজকের এই পোস্ট এ আমরা কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা সব কিছু জেনে যাবো। নামটা কমবেশি সকলেরই পরিচিত। তবে এখনও যারা এই প্রকল্পটির বিষয়ে পুরোপুরি অবগত নন, তাদের জন্যই আজকের এই আর্টিকেল।

কন্যাশ্রী প্রকল্প এর সুবিধা একনজরে:

  • কন্যাশ্রী প্রকল্প বাল্যবিবাহ বা কমবয়স্ক মেয়েদের অপ্রাপ্ত বয়েসে বিবাহ প্রতিরোধ এর জন্য অনেক ভালো। সরকারি এই প্রকল্প এর জন্যে আজ বহু মেয়ে উপকৃত আর স্বাধীন ভাবে জীবনযাপন করতে পারছে।
  • কন্যাশ্রী প্রকল্প এর ফলে মেয়েরা বাৎসরিক আর একালীন যে টাকা বা ভাতা পায় সেটা দিয়ে তারা উচ্চত্তর শিক্ষা ,ভোকেশনাল ট্রেনিং বা নিজের ইচ্ছেমতো সেদিন কিছু ছোটোখাটো ব্যবসা শুরু করতে পারে।
  • এছাড়াও কন্যাশ্রী প্রকল্প মেয়েদের মেডিকেল সুবিধা ও সাথে আরো অন্যান্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক কাজে আসে।

কন্যাশ্রী প্রকল্প কি(Kanyashree Prakalpa) ?

কন্যাশ্রী প্রকল্প হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি মহতী উদ্যোগ। ২০১৩ সাল থেকে, কন্যাশ্রী প্রকল্প হল পশ্চিমবঙ্গ
সরকারের অন্যতম আলোচিত প্রকল্প। শর্তসাপেক্ষ নগদ টাকা (Conditional Cash Transfer) প্রদানের মাধ্যমে
মেয়েদের, বিশেষ করে আর্থ-সামাজিকভাবে অনগ্রসর পরিবারের মেয়েদের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে এই প্রকল্পটি
রূপায়িত হয়েছিল। এটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নারী উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ বিভাগ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।

যোগ্যতা:
এবার আপনাদের জানাই, কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আসার জন্য কী কী শর্ত পূরণ করতে হবে?

প্রথমেই বলে রাখি, কন্যাশ্রী সব মেয়েদের জন্য নয়। বার্ষিক বৃত্তি এবং এককালীন অনুদান উভয়ই শুধুমাত্র তারাই
পাবেন যারা নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত হবেন।

  1. প্রথমত আবেদনকারীকে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হতে হবে।
  2. একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার নাম নথিভুক্ত থাকতে হবে এবং সেই প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত যোগদান করে পড়াশুনো করতে হবে।
  3. সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, এই প্রকল্পের আওতায় আসতে গেলে মেয়েটিকে অবিবাহিত হতে হবে।
  4. যে সমস্ত পরিবারের মোট বার্ষিক আয় ১,২০,০০০ টাকার বেশি নয়, তারাই এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
  5. তবে, যে সমস্ত মেয়েরা বিশেষভাবে সক্ষম (৪০% বা তার বেশি অক্ষমতা সহ) বা জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট,
    ২০০০ এর অধীনে নিবন্ধিত একটি হোমে বসবাস করছেন, বা পিতামাতা উভয়কেই হারিয়েছেন, তাদের পরিবারের বার্ষিক আয় ১,২০,০০০ টাকার বেশি হলেও কন্যাশ্রীর জন্য আবেদন করতে পারবে।

কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা:

  1. আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মেয়েদের যাতে অর্থের অভাবে পড়াশুনো করার পথ বন্ধ না হয়ে যায়, সেই
    উদ্দেশ্যেই এই প্রকল্পটির অবতারণা। কাজেই, এই প্রকল্পের মাধ্যমে মূলত নারীশিক্ষার উপরেই জোর দেওয়া হয়।
  2. প্রকল্পটিকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। K1 এবং K2। প্রথমটি, ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের জন্য,
    যাদের কন্যাশ্রী প্রকল্পে বার্ষিক বৃত্তি ৭৫০ টাকা দেওয়া হয়। দ্বিতীয়টি এককালীন অনুদান ২৫০০০ টাকা যা দেওয়া হয় ১৮ থেকে ১৯ বছরের মেয়েদের।
  3. নারীশিক্ষার উন্নয়নের পাশাপাশি এই প্রকল্পের অন্য একটি উদ্দেশ্যও রয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, যে
    আমাদের পশ্চিমবঙ্গে এখনও নারীদের বাল্যবিবাহ গ্রামাঞ্চলে বেশ প্রচলিত। নানারকম আইন কানুন থাকা
    সত্ত্বেও, আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ এখনও সমাজ থেকে উঠে
    যায়নি। এই বিষয়টিকে আটকাতে এই প্রকল্পটি বেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।
    ১৮ বছর বয়স অবধি অবিবাহিতা মেয়েরাই এই প্রকল্পের আওতায় থাকে। তাই ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে তাদের বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবার আগে এখন বেশ চিন্তা ভাবনা করতে হচ্ছে তাদের বাড়ির লোকজনকে।
  4. যাইহোক, এই প্রকল্পের আওতায় আসার ফলে অনেক মেয়েরা তাদের পড়াশুনা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারছে।
    বার্ষিক ৭৫০ টাকা এবং এককালীন ২৫০০০ টাকা পেয়ে তারা তাদের পড়াশুনোর ব্যয় বহন করতে পারছে।
    আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারের উপর থেকে তাদের মেয়ে সন্তানের পড়াশুনোর ব্যয় ভার অনেকটা কমছে। এটা
    নিঃসন্দেহে এক আমূল পরিবর্তন।
  5. কন্যাশ্রী প্রকল্প আর্থিক সাহায্য প্রদানের পাশাপাশি কিশোরী মেয়েদের ক্ষমতায়নের জন্য রূপায়িত একটি
    হাতিয়ার। কন্যাশ্রী প্রকল্পের আর্থিক সাহায্য সরাসরি মেয়েদের নামে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়। সেই
    অর্থ তারা কিভাবে ব্যবহার করবে, সেই সম্পর্কে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতেও এই প্রকল্প অনেক খানি সাহায্য করে।

কন্যাশ্রী প্রকল্প যোজনার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র:

এবারে আসুন জেনে নিই, এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে আবেদনপত্রের সাথে কি কি নথি জমা দিতে হয়।
এখানে কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় নথিগুলির একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে, যা আবেদনকারীকে
যথাযথভাবে জমা দিতে হবে:

  1. শিশু কন্যার জন্ম সার্টিফিকেট (Birth certificate)
  2. বার্ষিক আয় ১,২০,০০০/- টাকার নিচে প্রমাণ করার জন্য পারিবারিক আয়ের কথা উল্লেখ করতে হবে এবং
    সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে দেওয়া ইনকাম সার্টিফিকেট (Income Certificate) জমা দিতে হয়।
  3. অক্ষমতা শংসাপত্র বা Disability certificate (যদি সুবিধাভোগী অবিবাহিত হয়)
  4. অভিভাবক কর্তৃক বিবৃতি (Declaration Statement) প্রয়োজন হয় (যদি শিশু কন্যার পিতামাতা উভয়ই মৃত
    হয়)। এক্ষেত্রে, মৃত পিতামাতার মৃত্যুর শংসাপত্র (Death Certificate) প্রয়োজন হয়।
  5. শিশু কন্যার নাম, ঠিকানা এবং অ্যাকাউন্ট নম্বর সহ ব্যাঙ্ক পাসবুক প্রয়োজন হয়।
  6. পাসপোর্ট সাইজ ফটো
  7. অবিবাহিত হওয়ার প্রমাণপত্র, ইত্যাদি নথি জমা দিতে হয়।

কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য কীভাবে আবেদন করবেন?

চলুন দেখে নেওয়া যাক, কিভাবে এই প্রকল্পের আওতায় আসতে হয়।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পেতে নিম্নলিখিত আবেদন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে:

  1. সর্বাগ্রে, স্কুল/প্রতিষ্ঠান থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করুন।
  2. বার্ষিক বৃত্তির জন্য K1 ফর্মটি পূরণ করতে হবে এবং এককালীন অনুদানের জন্য K2 ফর্মটি পূরণ করতে হবে।
  3. মেয়ের (সুবিধাভোগী) নামে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। মেয়েটির নামে যে ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি খুলতে
    হবে তার সব অর্থ সেই একই অ্যাকাউন্টে জমা হবে।
  4. উপরে উল্লিখিত সমস্ত নথি অবশ্যই পূরণ করা আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করে জমা দিতে হবে।
  5. এরপর, নথি সহ ফর্মটি স্কুল/প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের কাছে জমা দিতে হবে এবং তিনি নিয়ম অনুযায়ী
    স্বাক্ষর করবেন এবং স্ট্যাম্প করবেন।
  6. ফর্ম জমা দেওয়ার পর একটি রসিদ (Receipt) আপনাকে দেওয়া হবে যা ভবিষ্যতে প্রয়োজন হতে পারে।
  7. এর পর ফর্ম প্রথমে ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার অফিসে মারফত,ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট অফিস এ যাবে তারপর সব তথ্য যাচাই করে কন্যাশ্রী এর টাকা প্রতিমাসে নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক একাউন্ট এ পাওয়া যাবে।
  8. প্রতিটি আবেদন এর সাথে একটি ID নম্বর থাকবে যা পরবর্তীকালে প্রকল্পটি সম্পর্কে কোনো সমস্যা ,জিজ্ঞাসা থাকলে জেনে নেয়া যাবে।

নারী এবং শিশু কন্যার সম্মানজনক ও স্বাধীন জীবন যাপনের জন্য শিক্ষার একটি ভালো ভিত্তি স্থাপন করা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ।

২০২২ এর হিসাব অনুযায়ী এর মধ্যে কন্যাশ্রী প্রকল্পটি প্রায় ২ কোটি এর উপর আবেদন করা হয়েছে আর এর সুবিধা এটি মধ্যে পাচ্ছেন প্রায় ৭৭ লক্ষ এর উপর আবেদনকারী।


কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা হিসাবে এটি জেনে রাখা দরকার যে এটি একটি উন্নত সমাজের কল্পনা করে যা বাল্যবিবাহের কুফলগুলির বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করে। বাল্যবিবাহের করাল গ্রাস থেকে মেয়েদের রক্ষা করতে কন্যাশ্রী প্রকল্প অভাবনীয় ভূমিকা নিয়েছে।

https://www.youtube.com/embed/9iNFIxsiGk4
Video Source: Roshni Sen, IAS Principal Secretary,YouTube

প্রকল্পটি অত্যন্ত জনপ্রিয় আর দেশ বিদেশে না জায়গাতে সমাদৃত হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো
আইটিইউ ও ইউ এন ওমেন সংগঠিত জিইএম-টেক অ্যাওয়ার্ড 2016 সালে চূড়ান্ত পর্যায় নির্বাচিত,ইউনাইটেড নেশনস WSIS ২০১৬।

কন্যাশ্রী মহিলাদের নিজস্ব পরিচয় তৈরি করতে সহযোগিতা করে। নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে সাহায্য
করে। যুক্তিযুক্ত ভাবে চিন্তা ভাবনা করতে এবং জীবনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে।

এই প্রকল্পটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় স্তরেই ব্যাপক স্বীকৃতি পেয়েছে। এর অভাবনীয় সাফল্য এবং
সর্বজনীন পরিষেবার জন্য সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারও লাভ করেছে জাতিসংঘের তরফে।

কন্যাশ্রী প্রকল্পের এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট কি?

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্পের এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট হলো https://www.wbkanyashree.gov.in/
এই ওয়েবসাইট এ আপনি কন্যাশ্রী প্রকল্পের যাবতীয় আরো অন্য বিষয় সম্পর্কে জানতে পারেন।

আশা করি, আজকের এই আর্টিকেল আপনাদের ভালো লেগেছে। কন্যাশ্রী প্রকল্প সম্বন্ধে বেশ কিছু তথ্য নিয়ে
লেখা এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসতে পারে। আর্টিকেলটিতে উল্লিখিত কোনো বিষয় নিয়ে
আপনাদের কোনো মন্তব্য বা লেখা নিয়ে কোনো সাজেশন আমাদের জানাতে ভুলবেন না।

শুভ্রজ্যোতি ঘোষ

About শুভ্রজ্যোতি ঘোষ

শুভ্রজ্যোতি ঘোষ একজন স্টুডেন্ট এবং টেক লাভার। গণিতে সে বি. এস. সি স্নাতক। পড়াশোনা ছাড়াও বাংলা কবিতা,গান শুনতে সে ভালোবাসে। তাছাড়াও ব্লগ লিখতে সে ভালোবাসে বিশেষত বাংলাতে।

View all posts by শুভ্রজ্যোতি ঘোষ →

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।